অ্যাসেজে অষ্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের শেষ দুই ব্যাটার যেভাবে ম্যাচ বাঁচালেন

অ্যাসেজ_অষ্ট্রেলিয়া_ইংল্যান্ড

২০২২ সালের অ্যাসেজ সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ। পঞ্চম দিন বিকেলে জমে উঠল দারুণ প্রাণবন্ত এক লড়াই। ইংল্যান্ডের লেজের দিকে ব্যাটসম্যানরা ম্যাচ বাঁচাতে জান প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছেন । আর অষ্ট্রেলিয়ার বোলাররা তখন সিংহের ডেরায় হরিণ শাবককে পেয়ে রক্ত মাংসের স্বাদ নেয়ার অপেক্ষায় ক্ষুধার্তের মত বল করে যাচ্ছেন।

সিরিজের আগের তিনটি ম্যাচ জিতে নিয়ে অষ্ট্রেলিয়া এমনিতেই নির্ভার ছিল। আর ইংল্যান্ডের ছিল হোয়াইট ওয়াশ থেকে রেহাই পাবার চেষ্টা। শেষদিনে ইংল্যান্ডের এটা জন্য বিরাট কঠিন এক ব্যাপার।

জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের টার্গেট ছিল ৩৮৮ রানের। সে লক্ষ্যে না গিয়ে ইংল্যান্ডের চেষ্টা ছিল কোনমতে ড্র করা। চতুর্থ দিন বিকেলে ইংল্যান্ডের দুই উদ্ধোধনী ব্যাটসম্যান ১১ ওভার মোকাবেলা করেন। অষ্ট্রেলিয়ার বোলারদের তোপ ভালভাবে সামাল দিয়ে বিনা উইকেটে দিন শেষ করেন ৩০ রানে।

সুতরাং টেষ্টের পঞ্চম দিনে ইংল্যান্ডের সামনে টার্গেট ছিল ৩৫৮ রানের। অষ্ট্রেলিয়ার বাউন্সি উইকেটে এটা খুব সহজ টার্গেট নয় কোনমতেই। তাছাড়া আগের তিন টেষ্টে হেরে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরাও তখন দিকভ্রান্ত নাবিক। জয়ের ঘাটে তরী ভেড়ানোর চেষ্টা করার মত আত্মবিশ্বাস ছিল না তাদের মধ্যে।

তাই সেই বিলাসিতায় না গিয়ে বাস্তবতাকে অনুধাবন করেন তারা। কীভাবে ম্যাচ বাঁচানো যায় সেই রণকৌশল ঠিক করেন ঠান্ডা মাথায়। তবুও পরিকল্পনা করা এক জিনিস আর সেটা বাস্তবায়ন করা অন্য জিনিস। আর অষ্ট্রেলিয়াও তো বিনা পরিকল্পনায় মাঠে নামবে না। তাই ম্যাচের টান টান লড়াইয়ের রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির পুরোটাই মঞ্চস্ত হয় শেষদিন বিকেলে।

তবে অলরাউন্ডার বেন স্টোক সহজে হার মানার পাত্র নন। রুটের বিদায়ের পর জনি বেয়ার ষ্টোকে নিয়ে পার করে দেন ম্যাচের বড় একটি সময়। তবে দ্বিতীয় ইনিংসের ৭৪.৫ বলে বেন ফিরে গেলে চাপে পড়ে ইংল্যান্ড। ১২৩ বলের সংগ্রামী ইনিংসে বেনের সংগ্রহ ছিল ৬০ রান।

দুই উইকেট রক্ষক ব্যাটার জনি বেয়ারষ্টো আর জস বাটলার এর পরও দাঁতে দাঁত ঘষে ব্যাচ বাঁচানোর প্রত্যয়ে দুর্বোধ্য প্রাচীর গড়ে তোলেন অষ্ট্রেলিয়ার বোলারদের সামনে। কিন্তু হাতের ভাঙা আঙ্গুল নিয়ে একসময় হাল ছেড়ে দিয়ে ফিরে আসেন জস বাটলার।  ৩৮ বলের মোকাবেলায় বাটলার করেন ১১ রান। দলীর রান তখন ৬ উইকেটে ২১৮।

একই রান ব্যবধানে উইকেটে এসেই পত্রপাঠ বিদায় নেন মার্ক উড। তবে জন বেয়ারষ্টো সেখানেই হাল ছেড়ে দেননি। জ্যাক লিচকে নিয়ে আরেকটি পার্টনারশীপ গড়ে তোলেন। লিচ উইকেটে সেট হয়ে যান জোকের মত। আউট হওয়ার সুযোগ না দিয়ে ম্যাচ বাঁচানোর লড়াইয়ে নিজেকেও সঁপে দেন ভাল মত।

কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বেয়ারষ্টো আউট হয়ে গেলে। ৯১.২ বলের মাথায় বোলানের বলে আউট হয়ে ফিরে যান বেয়ারস্টো। তার ১০৫ বলের ইনিংসে ম্যাচ বাঁচানোর পথে অনেক দূর এগিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত তীরে এসে তরী ডোবার মত অবস্থায় পরে ইংল্যান্ড।

জেমস এন্ডারসন
জেমস এন্ডারসন

আগের দিন ১১ ওভার খেলা হয়ে যাওয়াতে তখনও ৯ ওভার বাকি ছিল। ইংল্যান্ডের আট উইকেট নেই হয়ে গেছে। ক্রিজে যারা আছেন তারা কেউই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান নন। তবুও ইংল্যান্ডের লেজের দিকের ব্যাটসম্যানরা হাল ছেড়ে দেননি।

খেলা জমে ওঠে শেষ ওভারে। এর আগের ওভারেই জ্যাক লিচ ফিরে যান ২৬ রানে। উইকেটে তখন ষ্টুয়ার্ড ব্রড সেট ব্যাটার। তবে শেষ ওভার মোকাবেলায় ছিলেন ইংল্যান্ডের ১১ নাম্বার ব্যাটার জেমস এন্ডারসন। উইকেটে মাত্রই এসেছেন।

ছয় বল কোন মতে পার করে দিলেই ম্যাচ। ড্র। আবার আউট হয়ে গেলেই হারবে ইংল্যান্ড। টেষ্ট ক্রিকেটে এমন টান টান উত্তেজনা খুবই কম দেখা গেছে।

আলোক স্বল্পতায় তখন অষ্ট্রেলিয়ার পেসাররা বোলিংয়ে আসতে পারেননি। অনিয়মিত স্পিনার স্মিথ আর নাথান লায়ন অষ্ট্রেলিয়া আক্রমনে। শেষ ওভার বোলিংয়ের দায়িত্ব পড়ল স্মিথের ওপর।

কিন্তু স্মিথের ছয়টি বল অবিশ্বাস্যভাবে আটকে দিলেন ইংল্যান্ডের শেষ ব্যাটার জেমস এন্ডারসন। ক্লোজ অন ফিল্ডার রেখেও কোন এজ বের করতে পারেননি স্মিথ। এন্ডারসন  তুমুল উত্তেজনার মধ্যেও ঠান্ডা মাথায় টিকে রইলেন দিনের শেষ বল পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত ড্রয়ে পর্যবসিত হল একটি উত্তেজনাপূর্ণ শ্বাসরুদ্ধকর টেষ্ট ম্যাচ।

Related posts

Leave a Comment